বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১০

ড্রেনের অবস্থা বেহাল

পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলাম একটি এলাকা, যেখানে রাস্তার পাশের ড্রেনের চওড়া ১ ইঞ্চি থেকে দেড় ইঞ্চি হবে। এতে ময়লা ও কাদামাটি জমে ড্রেনের পানি সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ড্রেনে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং মশা মাছির জন্ম হচ্ছে। যা এলাকাবাসীর সুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ সমস্যা সমাধানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

মো: আমিনুর রহমান, পঞ্চগড়

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি বেশি অপরিচ্ছন্ন

পঞ্চগড় সরকারি হাসপাতালের নিচতলায় গিয়ে আমার বেশ ভাল লাগল। নিচতলটি মোটামুটি পরিস্কার মনে হয়েছিল। কিন্তু দোতলায় যাওয়ার পর আমি ব্যতিক্রম অবস্থা লক্ষ করি। কারণ সেখানকার কক্ষগুলো খুবই অপরিস্কার। বেডশিটগুলো ময়লা। তার পরে আমি মহিলা ওয়ার্ড এবং পুরুষ ওয়ার্ডে যাই। মহিলা এবং পুরুষ ওয়ার্ডগুলো মোটামুটি পরিস্কার ছিল। সবশেষে আমি শিশু ওর্য়াডে যাই। সেখানকার অবস্থা আমার খুবই খারাপ মনে হয়েছে। কারণ অন্য সব ওয়ার্ডের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডটি বেশি অপরিস্কার ছিল। আমি সেখানকার টয়লেটগুলোতে যাই, টয়লেটগুলো ছিল খুব অপরিস্কার। একটি শিশু বারান্দায় বসে মলমূত্র ত্যাগ করছিল। আমার পড়ে হয় শিশুদের ওয়ার্ডটি সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাদের কক্ষ, টয়লেট ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

জেসমিন আকতার জলি, পঞ্চগড়

পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের সুচিকিৎসা অভাব

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে পঞ্চগড় উত্তরবঙ্গের একটি জেলা। এই জেলা অন্যান্য জেলার তুলনায় সব দিকে অনুন্নত। বেশি শিল্প কারখানা না থাকায় এখানকার মানুষ অত্যন্ত দারিদ্রের মধ্যে জীবন-যাপন করে। ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা প্রয়োজন। পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসা একটি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় রাতের বেলা একজন রোগীকে বাংলাবান্ধা, আটোয়ারী বা দেবীগঞ্জ থেকে মূর্মুযু অবস্থায় জরুরী বিভাগে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখতে পায় না। এদিকে মুমূর্যূ রোগীকে রেখে সাথের লোকজন চিকিৎসা কর্মীদের খোঁজা শুরু করেন। এক সময় চিকিৎসা কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়। তাদেরকে এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে গেলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখান। শুধু তাই নয়, যিনি বর্হিবিভাগে রোগীদের টিকেট প্রদান করেন তাকেও সময়মত পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায় বাহিরে অনেক রোগী লাইন ধরে দাড়িয়ে আছেন, অথচ তিনি নাই। আবার টিকেটের দাম ৪.৫০ টাকা হলেও ৫.০০টাকা দেওয়া হলে ৫০ পয়সা ফেরত দেননা। ডাক্তাররা হাসপাতালের রোগীদের বেশি সময় না দিয়ে ক্লিনিকে বেশি সময় ব্যয় করেন। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ বিষয়টি যেন অত্যন্ত সহানুভূতির সাথে দেখা হয়।

আঁখি, পঞ্চগড়

বর্জ্য যখন যমদূত

পঞ্চগড় পৌরসভার বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পঞ্চগড় হিমালয়ের কন্যা বলে খ্যাত। সবুজ শ্যামল এ জেলাটি প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। পাঁচটি থানার সমন্বয়ে গঠিত এ জেলার আকৃতি নেহাৎ ছোট নয়। জেলা শহরের পৌরসভাটি তাদের কার্যক্রমে বিশেষ কৃতীত্বের দাবীদার। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য বর্তমানে এ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই শোচনীয়। জেলা শহরের প্রধান দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার ছাত্র/ছাত্রী পড়ালেখা করে। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সড়কগুলোর পাশের ড্রেনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বেশির ভাগ জায়গায় ড্রেনের উপর ঢাকনা না থাকায় প্রায়ই ছাত্র-ছাত্রীরা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। এছাড়া ড্রেনের বর্জ্য প্রায়ই রাস্তার উপর দীর্ঘদিন তুলে রাখা হয়। এর ফলে পরিবেশ যেমন দূষিত হয়ে গ্রাম বাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে, ঠিক তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় চলাচলে ভীষণ দূর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্জে উৎকট গন্ধ যেন যমদূত সদৃশ। এ গন্ধ নাকে ঢুকলে যেন পেট থেকে নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে আসতে চায়। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে জানা যায় বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নির্বিকার। হবে হবে, হচ্ছে করে বিষয়গুলো বছরের পর বছর ধরে সমাধান হয়নি। জনস্বার্থ রক্ষার্থে বিষয়টি বিবেচনায় এনে এর আশু প্রতিকার করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

মো: বায়েজীদ বোস্তামী, পঞ্চগড়

পঞ্চগড় সরকারি সদর হাসপাতালের দুর্গন্ধময় টয়লেট

পঞ্চগড় সরকারী সদর হাসপাতালের টয়লেটটি অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময়। একটি হাসপাতাল যা কিনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়, আজ তা রোগ ছড়ানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি অবিরত পানি পড়ছে, প্যান ভেঙ্গে পড়ে আছে, নোংরা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। নিয়মিত পরিস্কারের অভাবে টয়লেটটি ব্যবহারের অনুপযুক্ত। হাসপাতাল কতৃপক্ষকে অনুরোধ করছি টয়লেটটি যেন নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। আর যারা ব্যবহারকারী তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটি পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে হাসপাতালের টয়লেটটি পরিচ্ছন্ন রাখতে।

সুরাইয়া, পঞ্চগড়

বর্জ্য নয়, যেন বিষ

বর্জ্য উপযুক্ত জায়গায় অপসারণ না করলে পুরো এলাকার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এ কথা সচেতন নাগরিক মাত্রই স্বীকার করবেন। পঞ্চগড় বাজারের সামনে একটি বর্জের স্তুপ তৈরি হয়েছে। পঁচা দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির সহাবস্থান পুরো এলাকাটির পরিবেশকে দূষিত করছে। সেখানকার স্থানীয় দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বর্জ্য অপসারণ ও একটি স্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সমস্যাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পৌরসভা কতৃপক্ষকে দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি।

মো: রিপন, পঞ্চগড়

সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০১০

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল: পঞ্চগড়ের একমাত্র চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান

মহকুমা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় পঞ্চগড় দিনাজপুর জেলার অধিনে মহকুমা ছিল। ১৯৮৩ সালে পঞ্চগড় জেলা ঘোষণার সাথে সাথে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় । ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল। ২০০৩ সালে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ভবন উন্নয়নসহ হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা ১০০ তে উন্নীত করা হয়।

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ইনডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। জরুরী বিভাগে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা নিযে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৪ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০৬ জন রোগী নানা অসুখ বিসুখের চিকিৎসা নিয়ে থাকে। রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারীভাবে ঔষধ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মলম, স্যালাইন, ইনজেকশন, সিরিন্জ, খাওয়ার স্যালাইন, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, মলমূত্র পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। হাসপাতালে কিছু রোগের অপারেশনও করা হয়। এর মধ্যে হার্নিয়া, এপেনডি সাইড, টিউমার, ঘা, ইউট্রাসের অপারেশন এবং মাতৃত্বকালীন সকল চিকিৎসাসহ সিজার উল্লেখযোগ্য। খাদ্য বিষক্রিয়ায় বা বিষপানে অসুস্থ রোগীদেরও এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কোন রোগীকে পঞ্চগড় জেলার বাইরে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে রোগীকে দ্রুত কম খরচে পাশ্ববর্তি জেলার উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র পৌছানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থাও রয়েছে। আত্মহত্যা বা হত্যা কিংবা কোন প্রকার অপমৃত্যুর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ময়না তদন্তের ব্যবস্থা এই হাসপাতালে রয়েছে।

রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বছরের প্রতিটি দিনই হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্রটি সার্বক্ষণিক খোলা থাকে ও সেবা প্রদান করে। ইনডোরের চিকিৎসাধীন রোগীদের কিছু ঔষধ সরকারী ভাবে দেওয়া হয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সূচিকিৎসার স্বার্থে ব্যবস্থা পত্রও দিয়ে থাকে। ইনডোরের রোগীরা সকালের নাস্তাসহ সকল খাবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফ্রি পেয়ে থাকে। সে কারনে অসহায় ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাবারের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রতিদিন রোগীদের বিছানাপত্র পরিস্কার রাখার জন্য বেড সীট পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। রোগীদের আনুসাঙ্গিক ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য সুইপার আছে। রোগীদের রাতের বেলা সেবা নিশ্চিত করতে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নার্স ডিউটি পালন করে।

অনুসন্ধানে জানা যায় হাসপাতালের রোগীদের বিভিন্ন প্রকার ঔষধ প্রয়োজন হলেও সকল প্রকার ঔষধ সরকারীভাবে সরবরাহ না থাকায় সাধারন মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তারের পদ ৩৫টি থাকলেও কর্মরত ডাক্তার আছেন সরকারীভাবে মাত্র ০৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের সংখ্যা ৬৭ টি, কর্মরত আছেন ৪০ জন। আধুনিক সদর হাসপাতালে মোট সেবাদানকারীর পদের সংখ্যা ১৩৪ জন, সেবাদানকারী রয়েছেন মাত্র ৬৮ জন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তা অচল হয়ে আছে। জরুরী ভিত্তিতে রোগীদের সু-চিকিৎসার জন্য জেলার বাহিরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ০২টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ০১টি একেবারে অচল। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। লক্ষ লক্ষ টাকার সরঞ্জামাদি হাসপাতালে থাকলেও তা রক্ষনাবেক্ষনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। জেলা শহরের একমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগম ঘটে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুইপারের অভাবে হাসপাতালটি সার্বক্ষনিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের চাহিদা হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়াতে হবে। হাসপাতালের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি ও চুরি প্রতিরোধ করতে হবে। ইনডোর ও আউটডোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ ডাক্তারের রুমে যেতে পারবে না। অফিস সময়ে ডাক্তারের প্রাইভেট প্রাকটিস নিষিদ্ধ আইন পাস করতে হবে।

সেবা প্রদানকারীরদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে সমস্যাগুলি সমাধানের কোন আভাস পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী
মোঃ শাহজালাল
রিপোর্ট তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন প্রিয় রঞ্জন সরকার এবং রওশনারা শিমু