মহকুমা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় পঞ্চগড় দিনাজপুর জেলার অধিনে মহকুমা ছিল। ১৯৮৩ সালে পঞ্চগড় জেলা ঘোষণার সাথে সাথে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় । ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল। ২০০৩ সালে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ভবন উন্নয়নসহ হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা ১০০ তে উন্নীত করা হয়।
পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ইনডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। জরুরী বিভাগে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা নিযে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৪ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০৬ জন রোগী নানা অসুখ বিসুখের চিকিৎসা নিয়ে থাকে। রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারীভাবে ঔষধ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মলম, স্যালাইন, ইনজেকশন, সিরিন্জ, খাওয়ার স্যালাইন, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, মলমূত্র পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। হাসপাতালে কিছু রোগের অপারেশনও করা হয়। এর মধ্যে হার্নিয়া, এপেনডি সাইড, টিউমার, ঘা, ইউট্রাসের অপারেশন এবং মাতৃত্বকালীন সকল চিকিৎসাসহ সিজার উল্লেখযোগ্য। খাদ্য বিষক্রিয়ায় বা বিষপানে অসুস্থ রোগীদেরও এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কোন রোগীকে পঞ্চগড় জেলার বাইরে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে রোগীকে দ্রুত কম খরচে পাশ্ববর্তি জেলার উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র পৌছানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থাও রয়েছে। আত্মহত্যা বা হত্যা কিংবা কোন প্রকার অপমৃত্যুর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ময়না তদন্তের ব্যবস্থা এই হাসপাতালে রয়েছে।
রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বছরের প্রতিটি দিনই হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্রটি সার্বক্ষণিক খোলা থাকে ও সেবা প্রদান করে। ইনডোরের চিকিৎসাধীন রোগীদের কিছু ঔষধ সরকারী ভাবে দেওয়া হয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সূচিকিৎসার স্বার্থে ব্যবস্থা পত্রও দিয়ে থাকে। ইনডোরের রোগীরা সকালের নাস্তাসহ সকল খাবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফ্রি পেয়ে থাকে। সে কারনে অসহায় ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাবারের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রতিদিন রোগীদের বিছানাপত্র পরিস্কার রাখার জন্য বেড সীট পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। রোগীদের আনুসাঙ্গিক ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য সুইপার আছে। রোগীদের রাতের বেলা সেবা নিশ্চিত করতে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নার্স ডিউটি পালন করে।
অনুসন্ধানে জানা যায় হাসপাতালের রোগীদের বিভিন্ন প্রকার ঔষধ প্রয়োজন হলেও সকল প্রকার ঔষধ সরকারীভাবে সরবরাহ না থাকায় সাধারন মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তারের পদ ৩৫টি থাকলেও কর্মরত ডাক্তার আছেন সরকারীভাবে মাত্র ০৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের সংখ্যা ৬৭ টি, কর্মরত আছেন ৪০ জন। আধুনিক সদর হাসপাতালে মোট সেবাদানকারীর পদের সংখ্যা ১৩৪ জন, সেবাদানকারী রয়েছেন মাত্র ৬৮ জন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তা অচল হয়ে আছে। জরুরী ভিত্তিতে রোগীদের সু-চিকিৎসার জন্য জেলার বাহিরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ০২টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ০১টি একেবারে অচল। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। লক্ষ লক্ষ টাকার সরঞ্জামাদি হাসপাতালে থাকলেও তা রক্ষনাবেক্ষনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। জেলা শহরের একমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগম ঘটে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুইপারের অভাবে হাসপাতালটি সার্বক্ষনিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের চাহিদা হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়াতে হবে। হাসপাতালের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি ও চুরি প্রতিরোধ করতে হবে। ইনডোর ও আউটডোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ ডাক্তারের রুমে যেতে পারবে না। অফিস সময়ে ডাক্তারের প্রাইভেট প্রাকটিস নিষিদ্ধ আইন পাস করতে হবে।
সেবা প্রদানকারীরদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে সমস্যাগুলি সমাধানের কোন আভাস পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী
মোঃ শাহজালাল
রিপোর্ট তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন প্রিয় রঞ্জন সরকার এবং রওশনারা শিমু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন