রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১০

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার দুরবস্থা


মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চাই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এ পাঁচটি অধিকার ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব না। মানুষ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে যায়। বিশেষ করে সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে মানুষ বেশি গিয়ে থাকে। আমাদের দেশে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বিনামূল্যে সেবা দান করে থাকে। আমরা সাধারণ জনগোষ্ঠী বেশির ভাগ সময়ে সরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠানসমূহে গিয়ে থাকি। কিন্তু সেবা পাবার ক্ষেত্রে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের ১৬ নং ওয়ার্ডটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাওয়া যায় যে বাস্তবে এটি কত বড়। যে ওয়ার্ডের বারান্দায়ও রোগীদের জায়গা হয়। রোগীদের আশ্রয় নিতে হয়, হাসপাতালের রাস্তার উপর। যেখানে না আছে স্যালাইনের... না আছে বিদ্যুৎ এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। যেখানে ডাক্তার বা সেবিকারাও তাদের সেবা ঠিকমত দেয় না। ১৬ নং ওয়ার্ডটিতে বেডের সংখ্যা ৪০ টি, কিন্তু ঐ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ১৫০ এরও অধিক। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত ওয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। ৪০ টি রোগীর দেখাশোনার জন্য ২ টি নার্স ও একটি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছেন। তাদের একার পক্ষে সম্ভবপর হয় না রোগীর সঠিক সেবাদান করা। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। হাসপাতালের ১৫ নং ও ১৬ নং ওয়ার্ড এত অপরিস্কার যে রোগী সুস্থ না হয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ ওয়ার্ড গুলোতে ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও কোন মানুষই এর ব্যবহার করেন না। এছাড়া অনেক অপরিচিত লোকদের সমাগম হয়ে থাকে হাসপাতালে। ফলে রোগীরা তাদের জানমালের অনিরাপত্তায় ভোগেন। তাছাড়া আরো দেখা গেছে যে সেবিকারা তাদের সঠিক সেবাদানে অনীহা দেখান। তাদের অনীহার কারনে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও ঘটে। বিশেষ করে সেবিকা যারা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকেন তারা সাধারণ জনগণের ডাকে সাড়া দেন না। ১৫/১৬ নং ওয়ার্ডে রাতের বেলায় যেসব সেবিকা দায়িত্বে থাকনে তারা রাতের বেলায় ভেতরের রুমে গিয়ে ঘুমান। সেবিকারা রোগীদের সাথে কখনো ভালো ব্যবহার করেন না। ওয়ার্ডের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা রোগীর অধিকারের ঔষধ পথ্য ও খাবার রোগীদের না দিয়ে নিজেরাই ভোগ করেন। সেক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত জনগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক সময় হাসপাতালে অনেক দরিদ্র রোগী ভর্তি থাকে যাদের পক্ষে ৫০০-১০০০ টাকা খরচ করে ঔষধ ক্রয় করা সম্ভব হয় না। অনেক জনগণই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানে না। সেক্ষেত্রে রোগীটি কিভাবে সঠিক সেবা পাবে। সচেতন নাগরিকের উচিত সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো। হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থা আরো শোচনীয়। পানির সঠিক ব্যবস্থা অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। বাথরুমের পাশে ৫ মিনিট দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। সেখানে অনেক দুর্গন্ধ। রোগীরা সুস্থ্য হবার জন্য এখানে এসে অসুস্থ পড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন এ ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করে দেখে, এটি নিরুপণের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবার মান উন্নয়নে সহযোগীতা করুন।

শামীমা আহমেদ কথা, রাজশাহী

কোন মন্তব্য নেই: