রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১১

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাবুগঞ্জ উপজেলা, বরিশাল

বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে বাহেরচর গ্রামে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি উপজেলার একপ্রান্তে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির তিন দিক নদী দ্বারা বেষ্টিত। যোগাযোগের বাহন হচ্ছে ট্রলার, নৌকা। নদীভাঙ্গনের জন্য রাস্তা ঘাট ভালো নয়।

মৌলিক তথ্যঃ
প্রায় ৬ একর জমির উপর ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। দুইতলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বেড সংখ্যা ৩১টি। স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা আছে। UH&FPO, কনসালটেন্ট সার্জন, মেডিকেল অফিসার মেডিকেল অফিসার পদ ১৪টি।বর্তমান কোন শূন্য পদ নাই। নার্সিং সুপার ভাইজার ২ জন সহ স্টাফ নার্স আছে ১০ জন। কেন্দ্রটির মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১০৮ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৯১ জন। ১৭টি পদ শূন্য। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে MCH ইউনিট-১টি, IMCI কক্ষ ১টি, EPI কক্ষ ১টি, ORT কর্ণার ১টি এবং ডিসপেনসারী কক্ষ আছে ১টি। এখানে অন-বিভাগ এবং বর্হিবিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

ইতিবাচক দিকঃ
ছায়াঘেরা, কোলাহল মুক্ত নির্জন স্থানে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন। নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া চালু আছে। সে্বা,স্বাস্থ্য, শিক্ষা সম্পর্কিত ফিল্ম শো দেখানো হয় নিয়মিত। সেবাপ্রদানকারীদের ব্যবহার ভালো বিনিমিয় মূল্য নেয় না, রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। কোন ধরনের টেষ্টের ফি নেয়া হয় না। রেফারেল প্রক্রিয়া চালু আছে। ভর্তি ফি নেয়া হয় না এবং ভর্তি রোগীদের নার্স কর্তৃক ঔষধ সেবন করানো হয়।

সীমাবদ্ধতাঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, এ জন্য রোগীর সংখ্যা কম। ডাক্তারদের উপস্থিতির সময় ঠিক নাই। ডাক্তাররা এখানে থাকেন না। রাতের বেলা প্রয়োজনেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু অকেজো এবং ড্রাইভার নেই। EPI টেকনিশিয়ান পদ শূন্য। স্টোর কিপার, ফার্মাসিস্ট এর ২টি পদ শূন্য। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নেই। ঔষধ আসতে সময় লাগে।জেনোরেটরের ব্যবস্থা নেই। ভর্তি রোগীদের খাবারের মান খুবই খারাপ।

জনগণের মতামতঃ
স্থানীয় জনগণের কেন্দ্রেটি সম্পর্কে ধারণা বিরূপ। জনগণ কেন্দ্রেটির অবস্থান পরিবর্তন করতে চায়। রোগী আনার ব্যবস্থা নেই, নদী পথে রোগী আনার জন্য বিকিল্প ব্যবস্থা চালুর দাবী জনগণের। ভর্তি রোগী মো: আসলাম বলেন যে খাবার দেয় তা রোগীরা খেতে পারে না। বেলা ২টার পর কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায় না, সবাই চলে যায়। অপারেশনের জন্য জেনারটের চালু সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকির ব্যবস্থা করা দরকার। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি থাকলে সেবার মান পরিবর্তন হবে এ কথা জনগণের।
সেবাদানকারীর মতামতঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মর্তুজা আলম বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের জন্য রোগীর সংখ্যা কম। যারা এখানে সেবা নিতে আসনে তাদেরকে বিনিময় মূল্য ছাড়াই সেবা দেয়া হয় এবং সরকারি সাপ্লাই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়া হয় শূন্যপদ পূরণের জন্য উপরে চাহিদা দেয়া আছে।নতুন নিয়োগের মাধ্যমে ৩ জন মেডিকেল অফিসার যোগ দিয়েছে কিন্তু কতদিন থাকবে জানিনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ সহ জীবন যাত্রার মান খারাপ। প্রয়োজনের সময় কিছুই পাওয়া যায় না কারণ নদী ভাঙ্গন এলাকা। একজন ডাক্তারের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারা যায় না বিধায় ধরে রাখা যায় না। রোগীদের খাবারের বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই কারণ প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই একটি পরিবার খাবার দেয়ার দায়িত্বে আছেন।জনগণের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের স্থানটি পরিবর্তন হলে ভালো হতো জনগনকে সেবা দেয়া যেত মানসম্মতভাবে।

পর্যবেক্ষণঃ
সেবাগ্রহিতদের সাথে ডাক্তার ভালো ব্যবহার করেন।বিনিময় মূল্য নেয় না। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ, রোগীর সংখ্যা কম, ডাক্তার সহ কোন কর্মচারীরা সময় মত আসে না। মনিটরিং বোর্ড আছে তথ্য হালনাগাদ নয়। ভর্তি রোগীদের খাবার মান খুবই খারাপ, রোগীর বেড, ময়লা ফেলার গামলা, বেড প্যান অপরিস্কার। ওয়ার্ড পরিদর্শনে ডাক্তার সঠিক সময়ে যায় না। বর্হিবিভাগ প্রতিদিন গড়ে একঘণ্টা থেকে দুই ঘন্টা খোলা থাকে।সবাপ্রদানকারীরা তাদের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করেন না। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নাই বিধায় যে যার মতন করে দায়িত্ব পালন করেন।

সুপারিশঃ
• যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।
• নদীপথে রোগী আনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
• সেবাপ্রদানকারীদের ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে প্রয়োজনে রোগীরা ডাক্তারের সেবা নিতে পারে।
• উপরস্থ কর্তৃপক্ষের নজরদারিসহ তদারকি বাড়াতে হবে।
• রোগীদের খাবার মান পরিবির্তন করতে হবে।
• অপারেশনসহ রাতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে জেনারেটর চালু করতে হবে।এসব সমস্যাগুলো পরিবর্তন হলে অনেকাংশে রোগীর যাতায়াত বাড়বে ।

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালঃ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান

পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, মহকুমা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে। সে সময় পঞ্চগড় দিনাজপুর জেলার অধিনস্ত মহকুমা ছিল ১৯৮৩ সালে পঞ্চগড় জেলা ঘোষণার সাথে সাথে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল। ২০০৩ সালে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ভবন উন্নতিসহ ১০০ শয্যোর হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়।

হাসপাতালের ইতিবাচক দিকসমূহঃ পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ইনডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ জন চিকিৎসা সেবা নেয়। জরুরী বিভাগে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা নিযে কমপক্ষে প্রতিদিনে ৩৪ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০৬ জন রোগী নানা অসুখ বিসুখের চিকিৎসা নিয়ে থাকে। রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারীভাবে ঔষধ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মলম, স্যালাইন, ইনজেকশন, সিরিঞ্জ, খাওয়ার স্যালাইন, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা মলমূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে কিছু রোগের অপারেশন করা হয়। উল্লেখযোগ্য- হার্নিয়া, এপেনডিক্স, টিউমার, বিভিন্ন প্রকার ঘা, ইউট্রাসের অপারেশন সহ ছোটখাট আরও অনেক অপারেশন করা হয়। প্রকাশ মাতৃত্বকালীন সকল চিকিৎসা দেওয়াসহ সিজার করা হয়। খাদ্য বিষক্রিয়ায় বা বিষপানে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কোন রোগীকে পঞ্চগড় জেলার বাইরে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে রোগীকে দ্রুত কম খরচে পার্শ্ববর্তি জেলার উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র পৌছানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।
আত্মহত্যা বা হত্যা কিংবা কোন প্রকার অপমৃত্যুর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ময়না তদন্তের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বছরের প্রতিটি দিনই সার্বক্ষণিক হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্রটি খোলা থাকে ও সেবা প্রদান করে। ইনডোরের চিকিৎসাধীন রোগীদের কিছু ঔষধ সরকারী ভাবে দেওয়া হয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সূচিকিৎসার স্বার্থে ব্যবস্থা পত্র দিয়ে থাকে।
ইনডোরের রোগীরা সকালের নাস্তাসহ সকল খাবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফ্রি পেয়ে থাকে। সে কারনে অসহায় ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদ্যের জন্য সমস্যায় পরতে হয় না। প্রতিদিন রোগীদের বিছানাপত্র পরিস্কার রাখার জন্য বেড সীট পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। রোগীদের আনুসাঙ্গিক ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য সুইপার আছে। রোগীদের রাতের বেলা সেবা নিশ্চিত করতে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নার্স ডিউটি পালন করে।
সীমাবদ্ধতাঃ হাসপাতালের রোগীদের বিভিন্ন প্রকার ঔষধ প্রয়োজন হলেও সকল প্রকার ঔষধ সরকারীভাবে সরবরাহ না থাকায় সাধারন মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তারের পদ ৩৫টি থাকলেও কর্মরত ডাক্তার আছেন সরকারীভাবে মাত্র ০৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের সংখ্যা ৬৭ টি, কর্মরত আছেন ৪০ জন। আধুনিক সদর হাসপাতালে মোট সেবাদানকারীর পদের সংখ্যা ১৩৪ জন, সেবাদানকারী রয়েছেন মাত্র ৬৮ জন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও রোগীদের সার্বক্ষনিক সুবিধার্থের জন্য একটি জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তা অচল হয়ে আছে এবং জরুরী ভিত্তিতে রোগীদের সু-চিকিৎসার জন্য জেলার বাহিরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ০২টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ০১টি একেবারে অচল। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। লক্ষ লক্ষ টাকার সরঞ্জামাদি হাসপাতালে থাকলেও তা রক্ষনাবেক্ষনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। জেলা শহরের একমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগম ঘটে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুইপারের অভাবে হাসপাতালের সার্বক্ষনিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
জনগণের মতামতঃ ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়াতে হবে। হাসপাতালের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি ও চুরি প্রতিরোধ করতে হবে। ইনডোর ও আউটডোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ ডাক্তারের রুমে যেতে পারবে না। অফিস সময়ে ডাক্তারের প্রাইভেট প্রাকটিস নিষিদ্ধে আইন পাস করতে হবে।
সেবাদানকারীর মতামতঃ পদভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদানসহ জনবল বাড়াতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার নিমিত্তে সুইপার নিয়োগ এবং হাসপাতালের বিভিন্ন মূল্যবান সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নিয়োগ করতে হবে।

মোঃ শাহজালাল
সহযোগিতায়ঃ প্রিয় রঞ্জন সরকার,ও রওশনারা শিমু

একটু সচেতনতা দিতে পারে নিশ্চয়তা। আসুন না একটু সচেতন হই

পঞ্চগড় জেলায় রাজনগর একটি ছোট এলাকা। এ এলাকা পৌরসভার অভ্যন্তরে অবস্থিত। পৌরসভার সকল সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ একটু কম সচেতন। এই এলাকায় কিছু কিছু বাড়ির সামনে অনেক ময়লা আর্বজনা পড়ে থাকে। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও এলাকার মানুষ দূরে ডাস্টবিনে না গিয়ে বাড়ির বাহিরে ময়লা আবর্জনা ফেলে। রাস্তায় এসব ময়লা আর্বজনা পশু পাখি দ্বারা সমস্ত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে রাস্তা নোংরা হয় এবং জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়। এসব বর্জ্য পদার্থ হতে দুগর্ন্ধ ছড়ায় যা পরিবেশ ও বায়ু দূষণ করে ।

অপরদিকে এলাকার ভিতরে হোটেলের রান্নার জন্য একটি খোলা মাঠের পাশে কয়েকটি কাঁচা ঘর দেয়া হয়েছে, যেখানে রান্নার কাজ করা হয় এবং মাঠের মধ্যে একটি গর্ত করে তাতে সকল প্রকার রান্নার পরিত্যাক্ত জিনিস ও ময়লাযুক্ত পানি ফেলা হয়। এছাড়াও আশেপাশে সব বাড়ির ময়লা আর্বজনা সেখানে জমা করা হয়। এ কারনে সেখানকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে পাশাপাশি মাঠের মধ্যে যেসব ছেলেরা খেলা করে তাদের জন্য এসব বেশ অসুবিধাজনক ও ক্ষতিকর। কিন্তু তাদের এই দূষণযুক্ত পরিবেশই খেলতে হয়। এটি সমাজের একটি বিশাল সমস্যা, অথচ আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আসুন আমরা নিজেরা একটু সচেতন হই এবং অপরকে সচেতন করি । তবেই আমরা সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়তে পারবো ।
তুম্পা (স্বেচ্ছাসেবক)পঞ্চগড় থেকে।

আর কতদিন চলবে এ দূরাবস্থা

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১১কি.মি. দূরে অবস্থিত ৭৬ নং গলেহা কান্তমনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এ স্কুলে শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর ছিলো এবং শিক্ষামূলক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণও ছিল বেশ স্বতঃস্ফূত। এ স্কুলে বৃত্তি ও পেত অনেক ছাত্রছাত্রী। কিন্তু বতর্মান পরিস্থিতিতে এ স্কুলে শিক্ষার হার অনেক কম। সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে,৫ম শ্রেণীতে পড়া এমন কতগুলো ছাত্রছাত্রী নিজের নামটাও ঠিকমত লিখতে পারে না ।

অপরদিকে যে মাঠ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে থাকার কথা সে মাঠে এখন স্থানীয় এলাকাবাসীরা অবলীলায় গরু বাধে, কেউবা মাঠের সবুজ ঘাসে নিড়ানি দিয়ে ধান শুকায়, নেই কোন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ।বিনোদনের সঠিক চর্চা না থাকার এবং দক্ষ শিক্ষকদের অভাবে দিন দিন কমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার আগ্রহ। এভাবে এ স্কুল চলতে থাকলে এ স্কুলের শিক্ষার হার ক্রমশই কমে যাবে শূন্যের কোটায়, সে দিন আর দূরে নয় যদি এখনই হাল না ধরা হয়। তাই আর বসে থাকা নয় স্কুল কমিটির এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ।

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

যৌতুক প্রথা একটি ভয়াবহ সামাজিক অভিশাপ। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই কন্যার পিতারা এ যৌতুক প্রথার কবলে পতিত হয়েছে। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ীতে এর জন্য বহু নীপিড়ন সহ্য করছে। যতই দিন যাচ্ছে সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে ততই যেন যৌতুক প্রথার প্রকোপ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুর অত্যাচার, নারী নির্যাতন নিত্য খবর। 'পণ' হিসাবে মোটা অংকের নগদ টাকাতো আছে তার সাথে আরও মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, টিভি,ফ্রিজ, ইত্যাদি। এমনকি ফ্লাটবাড়ী, কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার খরচের কথাও কোথাও কোথাও এসে পড়ে । কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা হয়ত কন্যার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে তার যথাসর্বস্বকরে থাকে। কিন্তু কোন কারণে যদি পিতারা প্রতিশ্রুতি ঠিকমত পন্যসামগ্রী পাত্র পক্ষকে না দিতে পারে তাহলে মেয়ের উপর চলে নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্যাতন এমনকি হত্যা করার চক্রান্ত। পণ প্রথার পরিনাম হচ্ছে মারাত্বক। বর্তমান যৌতুক এক জায়গায় স্থির নয়। এক শ্রেণীর মানুষের সহজ অর্থ লোভ এ যৌতুক ও পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এ নিষ্ঠূর যৌতুক প্রথা বিলোপ করতে হবে এটা যেমন সমাজের দাবী তেমনি সরকারের দাবী।সরকার যৌতুক প্রথা বিলোপ করতে বহুদিন থেকেই উদ্যোগী হয়েছেন। এর জন্য আইন ও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার কতটুকুই বা কার্যকরী হয়ছে? এ ব্যাপারে সরকার এবং দেশের জনসাধারণ উভয় পক্ষই সমভাব দায়ী।

যে দেশের নারী সমাজ এখনো তাদের স্বামীর নাম মুখে আনতো না, সেই সমাজ থেকেই যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন তুলে দেয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু নারীর মুক্তির জন্য চাই নারী আন্দোলন, নইলে এ প্রথার বিষময় থেকে রেহাই নেই। আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমাজের প্রতিটি নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে।

তবে একটি আশার কথা, আমাদের নারী সমাজ একেবারে নীরব হয়ে নেই। তারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এখন এর সাথে সরকারী আইন যুক্ত হলেই যৌতুক প্রথা এদেশ থেকে অতিদ্রুত উঠে যাবে। আমাদের সকলের কামনা, দেশ থেকে এ অভিশাপ প্রথা উঠে যাক, বাঁচুক নারী সমাজ, বাঁচুক কন্যাদায়গ্রসত্ম পিতা-মাতা।


রাজশাহী থেকে
নিলুফার ইয়াসমনি

বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড়ে বোরো ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকের নতুন প্রযুক্তি, কৃষিবিদরা অবাক ।


পঞ্চগড় জেলায় তুলনামূলক শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেশী থাকায় বোরো মৌসুমে ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকদের নানা ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। সে কারণে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা বোরো চাষে লাভের মুখ সহসায় দেখতে পায় না । বোরো চাষের ক্ষেত্রে চারা উৎপাদনই মূল প্রতিবন্ধকতা ।

তবে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা কৃষিবিজ্ঞানকে হার মানিয়ে বোরো বীজ তোলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে চারা গজানোর নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে । কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় জমি চাষ করে বেড তৈরি করা হয় প্রথমে ।পরে ধানের বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুরো বেডটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়, বেডের ধার গুলো কাঁদা দিয়ে পলিথিনটি চেপে দেওয়া হয় । ৩০/৩৫ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলা হয় ।২/৪ দিন ফাঁকা থাকার পর কৃষকেরা বোরো বীজ তুলে জমিতে চারা রোপন করে ।

পঞ্চগড় পৌরএলাকার উত্তর জালাশীপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানায় এই পদ্ধতিতে আমরা বোরো ধানের বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদন করে আসছি। ফলনের ব্যাপারে কৃষক আশরাফুল বলেন আমরা আশানুরুপ ফলন পাচ্ছি। তবে চারাগুলো জন্ম থেকেই পলিথিনের ভিতরে বড় হওয়ার কারণে জমিতে রোপনের পর প্রায় ১০ ভাগ চারা মারা যায়। তিনি আরো বলেন এ পদ্ধতি আবিষ্কারের আগে বোরো চাষ আমাদের এ এলাকার জন্য ছিল কঠিন ব্যাপার। তারা নিজেরা এপদ্ধতি আবিষ্কার করে বোরো ধান চাষ শুরু করলেও দীর্ঘদিনেও তাদের কাছে কোন কৃষিবিদ জাননি কিংবা কোন বছরেও তারা কৃষি ভূর্তকি পাননি । পঞ্চগড় জেলায় বোরো চারা উৎপাদনের এপদ্ধতি এখন ব্যাপক জনপ্রিয় ।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কুমার চ্যাটার্জী জানান চলতি বোরো মৌসুমে ৪৩,৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হবে।
বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের খাদ্যশস্য গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গবেষণা কর্ম দায় সারা গোছেরভাবে চালিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশের সম্ভবনাময় জেলা পঞ্চগড়। কখনো খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যা সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে এ জেলার কৃষি ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর কাড়তে পারে নি এখনো। কি অদ্ভুত কৃষি বিজ্ঞানকে হার মানিয়ে পঞ্চগড়ের কৃষককূল বোরো চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে র্দীঘদিন ধরে বোরো ধান চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেই যাচ্ছে ।

ধান গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গোছানো পদ্ধতি ছাড়া নতুন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা ভাবনা করছে না ।প্রজাতন্ত্রের এ সকল কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সম্মানজনক বেতন ভাতা দামী গাড়ি আলিশান বাড়ি অফিস পিয়ন কেরানি সবই পেয়েছে ।

যাদের টাকায় এত সব কিছু তাদের জন্য সরকারী এ কৃষিবিজ্ঞানীরা কতটুকুই অবদান রাখছে। সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা তারা যেন আজো চাষা, সফল কৃষক হতে পারলো না । সফলতা বিজ্ঞানীদের, ব্যর্থতা কৃষকদের। বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের করপোরেট চিন্তা চেতনার পরিবতর্ন না হলে এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব না। প্রতি বছর মোট জনসংখ্যার সাথে ২০ লাখের বেশী মানুষ যোগ হচ্ছে, সাথে শতকরা ৪ ভাগ কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এখনই সময় দ্রুত আমরা সকলে মিলে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুপ্ত পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে আগামী প্রজন্মকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।

কমল কুমার সরকার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা কমলা প্রকল্প পঞ্চগড় অফিসে কর্মরত আছে। একদিন কমলা প্রকল্প অফিসে কৃষি বিজ্ঞানও বর্তমান কৃষির অবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। কৃষিবিজ্ঞানের উদাহরন দিয়ে শুরু করেন,শীতের কারণে সবজি বীজতলা রাতে প্লাস্টিক চালা দিয়ে ঢেকে দেয় এবং দিনের বেলায় খুলে দিতে হয়। এতে সূর্যের আলো ভালোভাবে পায় আর রাতে কুয়াশা এবং ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায় । কৃষি বিজ্ঞান মতে ধানের বোরো চারা ‌উৎপাদনে যে প্রযুক্তি এ অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে যা কোন বইতে বা গবেষণা থেকে তথ্য পাওয়া যায় নি । এখানে কৃষকরা বীজতলা তৈরী করার পরে অঙ্কুরিত ধানের বীজ ফেলে সম্পূর্ণ বীজের উপর রঙ্গিন এবং সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ফেলে আইলের চারপাশে কাঁদা দিয়ে আটকিয়ে দেয় যাতে পলিথিন সরে না যায়। ৩৫/৪০ দিন পর কৃষকরা সরাসরি পলিথিন সরিয়ে চারা উৎপাদন করে মাঠে রোপন করে সম্পূর্ণ চারা উৎপাদনের সময়টি পলিথিনে ঢেকে রাখে যা সূর্যের আলো বা বাতাস পায় না।
চারা উৎপাদনের জন্য যা দরকার -১.মাটি ২.আলো ৩.বাতাস ৪.এবংপানি এ কয়েকটি অবশ্যই প্রয়োজন। পঞ্চগড়ে বোরো চারা উৎপাদনে বর্তমান প্রযুক্তি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা করে গবেষণার ফলাফলটি কৃষকের মাঝে তুলে ধরা দরকার। কৃষিবিদ কমল কুমার কৃষি বিজ্ঞানের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরলেন। তার মতে, ধান চাষে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা হলে কৃষকদের কোন হয়রানীর মুখোমুখী হতে হবে না।

শাহ্জালাল
পঞ্চগড়

মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড়ে বহুমূখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ উদ্ধোধন

বহুমূখী পাট শিল্প উদ্যোক্তাদের ১০ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) থেকে পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর সহযোগিতায় দারিদ্র কল্যাণ সংস্থা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।


পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন। পঞ্চগড় শহরের ইসলামবাগে সংস্থার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী পরিচালক মো.শাহজালাল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের রংপুর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. মাজিদুর রহমান ভুইঁয়া ও সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম (শহীদ) বক্তব্য দেন।

প্রশিক্ষণে ২০ জন নারী উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছে। এতে পাট থেকে রকমারী পণ্য সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) প্রশিক্ষক মো. শামীম আহমেদ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন। দৈনন্দিন ব্যবহারোপযোগী সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস,ফার্নিশিং দ্রব্যাদি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানা যায় প্রশিক্ষণ শেষে দারিদ্র কল্যাণ সংস্থার নিজস্ব ক্ষুদ্র পাটকলে পাট জাত পন্য উৎপাদন কাজ করবে এসকল প্রশিক্ষনার্থী। স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত পাট পন্য সামগ্রী বাজার জাত করা হবে।