বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে বাহেরচর গ্রামে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি উপজেলার একপ্রান্তে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির তিন দিক নদী দ্বারা বেষ্টিত। যোগাযোগের বাহন হচ্ছে ট্রলার, নৌকা। নদীভাঙ্গনের জন্য রাস্তা ঘাট ভালো নয়।
মৌলিক তথ্যঃ
প্রায় ৬ একর জমির উপর ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। দুইতলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বেড সংখ্যা ৩১টি। স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা আছে। UH&FPO, কনসালটেন্ট সার্জন, মেডিকেল অফিসার মেডিকেল অফিসার পদ ১৪টি।বর্তমান কোন শূন্য পদ নাই। নার্সিং সুপার ভাইজার ২ জন সহ স্টাফ নার্স আছে ১০ জন। কেন্দ্রটির মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১০৮ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৯১ জন। ১৭টি পদ শূন্য। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে MCH ইউনিট-১টি, IMCI কক্ষ ১টি, EPI কক্ষ ১টি, ORT কর্ণার ১টি এবং ডিসপেনসারী কক্ষ আছে ১টি। এখানে অন-বিভাগ এবং বর্হিবিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
ইতিবাচক দিকঃ
ছায়াঘেরা, কোলাহল মুক্ত নির্জন স্থানে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন। নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া চালু আছে। সে্বা,স্বাস্থ্য, শিক্ষা সম্পর্কিত ফিল্ম শো দেখানো হয় নিয়মিত। সেবাপ্রদানকারীদের ব্যবহার ভালো বিনিমিয় মূল্য নেয় না, রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। কোন ধরনের টেষ্টের ফি নেয়া হয় না। রেফারেল প্রক্রিয়া চালু আছে। ভর্তি ফি নেয়া হয় না এবং ভর্তি রোগীদের নার্স কর্তৃক ঔষধ সেবন করানো হয়।
সীমাবদ্ধতাঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, এ জন্য রোগীর সংখ্যা কম। ডাক্তারদের উপস্থিতির সময় ঠিক নাই। ডাক্তাররা এখানে থাকেন না। রাতের বেলা প্রয়োজনেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু অকেজো এবং ড্রাইভার নেই। EPI টেকনিশিয়ান পদ শূন্য। স্টোর কিপার, ফার্মাসিস্ট এর ২টি পদ শূন্য। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নেই। ঔষধ আসতে সময় লাগে।জেনোরেটরের ব্যবস্থা নেই। ভর্তি রোগীদের খাবারের মান খুবই খারাপ।
জনগণের মতামতঃ
স্থানীয় জনগণের কেন্দ্রেটি সম্পর্কে ধারণা বিরূপ। জনগণ কেন্দ্রেটির অবস্থান পরিবর্তন করতে চায়। রোগী আনার ব্যবস্থা নেই, নদী পথে রোগী আনার জন্য বিকিল্প ব্যবস্থা চালুর দাবী জনগণের। ভর্তি রোগী মো: আসলাম বলেন যে খাবার দেয় তা রোগীরা খেতে পারে না। বেলা ২টার পর কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায় না, সবাই চলে যায়। অপারেশনের জন্য জেনারটের চালু সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকির ব্যবস্থা করা দরকার। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি থাকলে সেবার মান পরিবর্তন হবে এ কথা জনগণের।
সেবাদানকারীর মতামতঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মর্তুজা আলম বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের জন্য রোগীর সংখ্যা কম। যারা এখানে সেবা নিতে আসনে তাদেরকে বিনিময় মূল্য ছাড়াই সেবা দেয়া হয় এবং সরকারি সাপ্লাই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়া হয় শূন্যপদ পূরণের জন্য উপরে চাহিদা দেয়া আছে।নতুন নিয়োগের মাধ্যমে ৩ জন মেডিকেল অফিসার যোগ দিয়েছে কিন্তু কতদিন থাকবে জানিনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ সহ জীবন যাত্রার মান খারাপ। প্রয়োজনের সময় কিছুই পাওয়া যায় না কারণ নদী ভাঙ্গন এলাকা। একজন ডাক্তারের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারা যায় না বিধায় ধরে রাখা যায় না। রোগীদের খাবারের বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই কারণ প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই একটি পরিবার খাবার দেয়ার দায়িত্বে আছেন।জনগণের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের স্থানটি পরিবর্তন হলে ভালো হতো জনগনকে সেবা দেয়া যেত মানসম্মতভাবে।
পর্যবেক্ষণঃ
সেবাগ্রহিতদের সাথে ডাক্তার ভালো ব্যবহার করেন।বিনিময় মূল্য নেয় না। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ, রোগীর সংখ্যা কম, ডাক্তার সহ কোন কর্মচারীরা সময় মত আসে না। মনিটরিং বোর্ড আছে তথ্য হালনাগাদ নয়। ভর্তি রোগীদের খাবার মান খুবই খারাপ, রোগীর বেড, ময়লা ফেলার গামলা, বেড প্যান অপরিস্কার। ওয়ার্ড পরিদর্শনে ডাক্তার সঠিক সময়ে যায় না। বর্হিবিভাগ প্রতিদিন গড়ে একঘণ্টা থেকে দুই ঘন্টা খোলা থাকে।সবাপ্রদানকারীরা তাদের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করেন না। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নাই বিধায় যে যার মতন করে দায়িত্ব পালন করেন।
সুপারিশঃ
• যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।
• নদীপথে রোগী আনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
• সেবাপ্রদানকারীদের ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে প্রয়োজনে রোগীরা ডাক্তারের সেবা নিতে পারে।
• উপরস্থ কর্তৃপক্ষের নজরদারিসহ তদারকি বাড়াতে হবে।
• রোগীদের খাবার মান পরিবির্তন করতে হবে।
• অপারেশনসহ রাতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে জেনারেটর চালু করতে হবে।এসব সমস্যাগুলো পরিবর্তন হলে অনেকাংশে রোগীর যাতায়াত বাড়বে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন