বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১১
পঞ্চগড়ে বোরো ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকের নতুন প্রযুক্তি, কৃষিবিদরা অবাক ।
পঞ্চগড় জেলায় তুলনামূলক শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেশী থাকায় বোরো মৌসুমে ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকদের নানা ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। সে কারণে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা বোরো চাষে লাভের মুখ সহসায় দেখতে পায় না । বোরো চাষের ক্ষেত্রে চারা উৎপাদনই মূল প্রতিবন্ধকতা ।
তবে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা কৃষিবিজ্ঞানকে হার মানিয়ে বোরো বীজ তোলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে চারা গজানোর নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে । কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় জমি চাষ করে বেড তৈরি করা হয় প্রথমে ।পরে ধানের বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুরো বেডটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়, বেডের ধার গুলো কাঁদা দিয়ে পলিথিনটি চেপে দেওয়া হয় । ৩০/৩৫ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলা হয় ।২/৪ দিন ফাঁকা থাকার পর কৃষকেরা বোরো বীজ তুলে জমিতে চারা রোপন করে ।
পঞ্চগড় পৌরএলাকার উত্তর জালাশীপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানায় এই পদ্ধতিতে আমরা বোরো ধানের বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদন করে আসছি। ফলনের ব্যাপারে কৃষক আশরাফুল বলেন আমরা আশানুরুপ ফলন পাচ্ছি। তবে চারাগুলো জন্ম থেকেই পলিথিনের ভিতরে বড় হওয়ার কারণে জমিতে রোপনের পর প্রায় ১০ ভাগ চারা মারা যায়। তিনি আরো বলেন এ পদ্ধতি আবিষ্কারের আগে বোরো চাষ আমাদের এ এলাকার জন্য ছিল কঠিন ব্যাপার। তারা নিজেরা এপদ্ধতি আবিষ্কার করে বোরো ধান চাষ শুরু করলেও দীর্ঘদিনেও তাদের কাছে কোন কৃষিবিদ জাননি কিংবা কোন বছরেও তারা কৃষি ভূর্তকি পাননি । পঞ্চগড় জেলায় বোরো চারা উৎপাদনের এপদ্ধতি এখন ব্যাপক জনপ্রিয় ।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কুমার চ্যাটার্জী জানান চলতি বোরো মৌসুমে ৪৩,৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হবে।
বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের খাদ্যশস্য গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গবেষণা কর্ম দায় সারা গোছেরভাবে চালিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশের সম্ভবনাময় জেলা পঞ্চগড়। কখনো খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যা সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে এ জেলার কৃষি ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর কাড়তে পারে নি এখনো। কি অদ্ভুত কৃষি বিজ্ঞানকে হার মানিয়ে পঞ্চগড়ের কৃষককূল বোরো চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে র্দীঘদিন ধরে বোরো ধান চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেই যাচ্ছে ।
ধান গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গোছানো পদ্ধতি ছাড়া নতুন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা ভাবনা করছে না ।প্রজাতন্ত্রের এ সকল কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সম্মানজনক বেতন ভাতা দামী গাড়ি আলিশান বাড়ি অফিস পিয়ন কেরানি সবই পেয়েছে ।
যাদের টাকায় এত সব কিছু তাদের জন্য সরকারী এ কৃষিবিজ্ঞানীরা কতটুকুই অবদান রাখছে। সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা তারা যেন আজো চাষা, সফল কৃষক হতে পারলো না । সফলতা বিজ্ঞানীদের, ব্যর্থতা কৃষকদের। বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের করপোরেট চিন্তা চেতনার পরিবতর্ন না হলে এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব না। প্রতি বছর মোট জনসংখ্যার সাথে ২০ লাখের বেশী মানুষ যোগ হচ্ছে, সাথে শতকরা ৪ ভাগ কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এখনই সময় দ্রুত আমরা সকলে মিলে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুপ্ত পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে আগামী প্রজন্মকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।
কমল কুমার সরকার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা কমলা প্রকল্প পঞ্চগড় অফিসে কর্মরত আছে। একদিন কমলা প্রকল্প অফিসে কৃষি বিজ্ঞানও বর্তমান কৃষির অবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। কৃষিবিজ্ঞানের উদাহরন দিয়ে শুরু করেন,শীতের কারণে সবজি বীজতলা রাতে প্লাস্টিক চালা দিয়ে ঢেকে দেয় এবং দিনের বেলায় খুলে দিতে হয়। এতে সূর্যের আলো ভালোভাবে পায় আর রাতে কুয়াশা এবং ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায় । কৃষি বিজ্ঞান মতে ধানের বোরো চারা উৎপাদনে যে প্রযুক্তি এ অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে যা কোন বইতে বা গবেষণা থেকে তথ্য পাওয়া যায় নি । এখানে কৃষকরা বীজতলা তৈরী করার পরে অঙ্কুরিত ধানের বীজ ফেলে সম্পূর্ণ বীজের উপর রঙ্গিন এবং সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ফেলে আইলের চারপাশে কাঁদা দিয়ে আটকিয়ে দেয় যাতে পলিথিন সরে না যায়। ৩৫/৪০ দিন পর কৃষকরা সরাসরি পলিথিন সরিয়ে চারা উৎপাদন করে মাঠে রোপন করে সম্পূর্ণ চারা উৎপাদনের সময়টি পলিথিনে ঢেকে রাখে যা সূর্যের আলো বা বাতাস পায় না।
চারা উৎপাদনের জন্য যা দরকার -১.মাটি ২.আলো ৩.বাতাস ৪.এবংপানি এ কয়েকটি অবশ্যই প্রয়োজন। পঞ্চগড়ে বোরো চারা উৎপাদনে বর্তমান প্রযুক্তি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা করে গবেষণার ফলাফলটি কৃষকের মাঝে তুলে ধরা দরকার। কৃষিবিদ কমল কুমার কৃষি বিজ্ঞানের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরলেন। তার মতে, ধান চাষে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা হলে কৃষকদের কোন হয়রানীর মুখোমুখী হতে হবে না।
শাহ্জালাল
পঞ্চগড়
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন