বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১১

প্রকৌশল শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষার নবদিগন্ত

দেশে প্রতি বৎসর হাজার হাজার মেধাবী ছাত্র- ছাত্রী এইস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করে পাশ করছে। এদের অধিকাংশরই ইচ্ছে থাকে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিপরীতে সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে মাত্র ৪ টি। আর এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে এই বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আর প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারের অভাবে বহি:বিশ্বের সাথে আমাদের দেশ তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে পারছে না। এসবদিক বিবেচনা করে দেশে প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারের জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

শুরুরকথাঃ
মূল শহর থেকে আনুমানিক ৭কিমি দূরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অত্যাধুনিক ডিজাইনের বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি বিল্ডিং নিয়ে ৬.২ একর জায়গায় ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অত্যন্ত আভিজাত্যর্পূণ ও মনোমুগ্ধকর এই ক্যাম্পাস ।

এ কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের অধিভূক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ৬০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর মাধ্যমে শুরু হয় এই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে এ কলেজে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু আছে। বর্তমানে কলেজটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই তিন বিভাগের জন্য তিনটি ডিপার্টমেন্টাল ভবন, ২টি ছাত্রহল, ১টি ছাত্রীহল, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও ১টি লাইব্রেরী ভবন নিয়ে সর্বমোট ১৩টি ভবন রয়েছে। ২টি ছাত্রহল এবং ১টি ছাত্রীহলে প্রায় ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসন সুব্যাবস্থা আছে। ৫ তলাবিশিষ্ট প্রতিটি ডিপার্টমেন্টাল ভবনে রয়েছে অত্যাধুনিক মানের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী। ৫ তলাবিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সভূক্ত শত শত দেশী-বিদেশী বই সম্বলিত ১টি স্টাডি কক্ষ, ১টি সেমিনার কক্ষ, এছাড়াও লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে সর্বক্ষন অনলাইনে পড়াশুনা করার সুবিধা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে এসে গেছে, ফলশ্রুতিতে আগামী বৎসর থেকে এই ২টি বিভাগ চালু হবে বলে জানা যায়। বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষক সংকট বিরাজমান। ফলে পড়ালেখার মানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজন শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসেবে এবং কয়েকজন শিক্ষককে প্রেষণে এখানে আনা হয়েছে । বর্তমানে এখানে মোট ১৭জন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন । কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড.রতন কুমার নন্দী স্যারের কাছে থেকে জানা গেল, কলেজের যেকোনো সমস্যা নিরসনে এখানকার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে মিলে একত্রে আন্তরিক ভাবে কাজ করা হয়। এভাবে নতুন কলেজের অনেক সমস্যার সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে । ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখার ব্যাপারে যত্নবান ।ইতোমধ্যে ১ম ব্যাচের ৩৫জন শিক্ষার্থী ১ম সেমিষ্টার পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য বিশেষ বৃওি লাভ করেছে যা নবীণ এই কলেজের উচ্চ মানের পাঠদনের বিষয়টি প্রমাণ করে ।
ভর্তি প্রক্রিয়াঃ
এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হতে গেলে ভর্তি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় । এস.এস.সি এবং এইস.এস.সি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট জিপিএ ৮ (৪র্থ বিষয় বাদে) পেলে এবং এইস এস সি তে গনিত,পদার্থ ও রসায়ন প্রতিটি বিষয়ে জিপিএ ৪ পেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আবেদন করা যায় । এছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র- ছাত্রীদের আবেদন করার ক্ষেত্রে GEO 'O' লেভেল এবং GEO 'A' লেভেল এ পদার্থ, রসায়ন, গনিত, ইংরেজিসহ ৫টি বিষয়ে গড়ে B গ্রেড পেতে হবে তবে GEO 'A' লেভেলে পদাথ , রসায়ন, গনিত এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে দুইটি বিষয়ে অবশ্যই 'A' গ্রেড থাকতে হবে । বর্তমানে এ কলেজে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগ চালু আছে । আগামীতে সিভিল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু হবে বলে জানা যায়। ভর্তি সংক্রান্ত যেকোন তথ্য জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের ঠিকানায় :ফোন : ৮৮-০৯১-৫২১১১ মোবাইল: ০১৭২৫৪৪৪৫৯২

বিশেষত্ব: দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন তথাকথিত নোংরা ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে আক্রান্ত তখন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সেদিক থেকে পুরোপুরি মুক্ত । এ কলেজের কয়েকজন শিড়্গার্থী বললেন ,’আমরা সকল ছাত্র- ছাত্রী এই কলুষিত ছাত্ররাজনীতির বিরূদ্ধে একএিত ’। এ কলেজ পুরোপুরি মাদক এবং ইভটিজিং মুক্ত । এ কলেজের শিড়্গার্থী সিয়াম জানালেন , “এখানে ইভটিজিং করলে কেউ ছাড় পাবে না , ইভটিজারের স্থান এই ক্যাম্পাসে হবে না ”। পাশে দাড়িয়ে থাকা আরিফ এবং মুক্তাদির সিয়ামের এই উক্তির প্রতি জোরালো সমর্থন জানান ।
বিভিন্ন দল-উপদলঃ
এখানকার ছাত্র- ছাত্রীরা বিভিন্ন দল-উপদল গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ,তবে এসব দল-উপদল গ্রুপিং কিন্ত তথাকথিত নোংরা ছাত্ররাজনীতির নয় । এখানকার কোনো কোনো দল সাংস্কৃতিক সংগঠন করে, আবার কোনো কোনো দল করে সায়েন্স ক্লাব ,এছাড়া আরও আছে অনেক গুলো স্টাডি গ্রুপ । এরকমই একটি স্টাডি গ্রুপের সদস্য আমির হামজা বললেন,“ গ্রুপ স্টাডি ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সম্ভব না । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনার মডেল এই স্টাডি গ্রুপগুলোতে গ্রুপ স্টাডির কারনেই এখানকার ছাত্র- ছাত্রীরা সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ভাল ফল করছে”।


কিছু সমস্যা-কিছু সংকটঃ
নবীন এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সমস্যা-সংকটের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ছাত্র- ছাত্রীরা জানালেন, এ কলেজে তীব্র শিক্ষক সংকট বিরাজমান । এ কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বললেন,“বর্তমানে কলেজে দুটি ব্যাচের মাত্র ১২০ ছাত্র- ছাত্রী থাকায় এবং কয়েকজন অতিথি শিক্ষক থাকায় এই শিক্ষক সংকটের ব্যাপারটি অনুভূত হচ্ছে না কিনা আগামী ২-১ বৎসরের মধ্যে যখন আরও কয়েক ব্যাচের ছাত্র- ছাত্রী ভর্তি হবে তখন অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে যাবে । তাই আমার মনে হয় সংকটের এই ব্যাপারটি শোচনীয় হওয়ার আগেই এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিৎ ”। এই কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো মসজিদ নেই । অথচ একটি মসজিদ থাকা অত্যন্ত জরুরী । ছাত্ররা কলেজ ক্যাম্পাসে অতিসত্বর একটি মসজিদ নিমার্ণের দাবি জানান । ছাত্রহলের ডাইনিং এ গ্যাসের সংযোগ দেওয়াও অতি জরুরী । এছাড়া মুক্তাদির-আবিরদের কাছে থেকে জানা গেলো লাইব্রেরী-ছাত্রহল এবং কলেজে বিভিন্ন দপ্তরে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন হলেও কর্মচারী আছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
শয়ন কুমার রায়

কোন মন্তব্য নেই: