বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১১

প্রকৌশল শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষার নবদিগন্ত

দেশে প্রতি বৎসর হাজার হাজার মেধাবী ছাত্র- ছাত্রী এইস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করে পাশ করছে। এদের অধিকাংশরই ইচ্ছে থাকে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিপরীতে সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে মাত্র ৪ টি। আর এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে এই বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আর প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারের অভাবে বহি:বিশ্বের সাথে আমাদের দেশ তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে পারছে না। এসবদিক বিবেচনা করে দেশে প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারের জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

শুরুরকথাঃ
মূল শহর থেকে আনুমানিক ৭কিমি দূরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অত্যাধুনিক ডিজাইনের বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি বিল্ডিং নিয়ে ৬.২ একর জায়গায় ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অত্যন্ত আভিজাত্যর্পূণ ও মনোমুগ্ধকর এই ক্যাম্পাস ।

এ কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের অধিভূক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ৬০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর মাধ্যমে শুরু হয় এই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে এ কলেজে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু আছে। বর্তমানে কলেজটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই তিন বিভাগের জন্য তিনটি ডিপার্টমেন্টাল ভবন, ২টি ছাত্রহল, ১টি ছাত্রীহল, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ও ১টি লাইব্রেরী ভবন নিয়ে সর্বমোট ১৩টি ভবন রয়েছে। ২টি ছাত্রহল এবং ১টি ছাত্রীহলে প্রায় ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসন সুব্যাবস্থা আছে। ৫ তলাবিশিষ্ট প্রতিটি ডিপার্টমেন্টাল ভবনে রয়েছে অত্যাধুনিক মানের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী। ৫ তলাবিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সভূক্ত শত শত দেশী-বিদেশী বই সম্বলিত ১টি স্টাডি কক্ষ, ১টি সেমিনার কক্ষ, এছাড়াও লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে সর্বক্ষন অনলাইনে পড়াশুনা করার সুবিধা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে এসে গেছে, ফলশ্রুতিতে আগামী বৎসর থেকে এই ২টি বিভাগ চালু হবে বলে জানা যায়। বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষক সংকট বিরাজমান। ফলে পড়ালেখার মানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজন শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসেবে এবং কয়েকজন শিক্ষককে প্রেষণে এখানে আনা হয়েছে । বর্তমানে এখানে মোট ১৭জন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন । কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড.রতন কুমার নন্দী স্যারের কাছে থেকে জানা গেল, কলেজের যেকোনো সমস্যা নিরসনে এখানকার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে মিলে একত্রে আন্তরিক ভাবে কাজ করা হয়। এভাবে নতুন কলেজের অনেক সমস্যার সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে । ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখার ব্যাপারে যত্নবান ।ইতোমধ্যে ১ম ব্যাচের ৩৫জন শিক্ষার্থী ১ম সেমিষ্টার পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য বিশেষ বৃওি লাভ করেছে যা নবীণ এই কলেজের উচ্চ মানের পাঠদনের বিষয়টি প্রমাণ করে ।
ভর্তি প্রক্রিয়াঃ
এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হতে গেলে ভর্তি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় । এস.এস.সি এবং এইস.এস.সি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট জিপিএ ৮ (৪র্থ বিষয় বাদে) পেলে এবং এইস এস সি তে গনিত,পদার্থ ও রসায়ন প্রতিটি বিষয়ে জিপিএ ৪ পেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আবেদন করা যায় । এছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র- ছাত্রীদের আবেদন করার ক্ষেত্রে GEO 'O' লেভেল এবং GEO 'A' লেভেল এ পদার্থ, রসায়ন, গনিত, ইংরেজিসহ ৫টি বিষয়ে গড়ে B গ্রেড পেতে হবে তবে GEO 'A' লেভেলে পদাথ , রসায়ন, গনিত এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে দুইটি বিষয়ে অবশ্যই 'A' গ্রেড থাকতে হবে । বর্তমানে এ কলেজে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগ চালু আছে । আগামীতে সিভিল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু হবে বলে জানা যায়। ভর্তি সংক্রান্ত যেকোন তথ্য জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের ঠিকানায় :ফোন : ৮৮-০৯১-৫২১১১ মোবাইল: ০১৭২৫৪৪৪৫৯২

বিশেষত্ব: দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন তথাকথিত নোংরা ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে আক্রান্ত তখন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সেদিক থেকে পুরোপুরি মুক্ত । এ কলেজের কয়েকজন শিড়্গার্থী বললেন ,’আমরা সকল ছাত্র- ছাত্রী এই কলুষিত ছাত্ররাজনীতির বিরূদ্ধে একএিত ’। এ কলেজ পুরোপুরি মাদক এবং ইভটিজিং মুক্ত । এ কলেজের শিড়্গার্থী সিয়াম জানালেন , “এখানে ইভটিজিং করলে কেউ ছাড় পাবে না , ইভটিজারের স্থান এই ক্যাম্পাসে হবে না ”। পাশে দাড়িয়ে থাকা আরিফ এবং মুক্তাদির সিয়ামের এই উক্তির প্রতি জোরালো সমর্থন জানান ।
বিভিন্ন দল-উপদলঃ
এখানকার ছাত্র- ছাত্রীরা বিভিন্ন দল-উপদল গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ,তবে এসব দল-উপদল গ্রুপিং কিন্ত তথাকথিত নোংরা ছাত্ররাজনীতির নয় । এখানকার কোনো কোনো দল সাংস্কৃতিক সংগঠন করে, আবার কোনো কোনো দল করে সায়েন্স ক্লাব ,এছাড়া আরও আছে অনেক গুলো স্টাডি গ্রুপ । এরকমই একটি স্টাডি গ্রুপের সদস্য আমির হামজা বললেন,“ গ্রুপ স্টাডি ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সম্ভব না । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনার মডেল এই স্টাডি গ্রুপগুলোতে গ্রুপ স্টাডির কারনেই এখানকার ছাত্র- ছাত্রীরা সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ভাল ফল করছে”।


কিছু সমস্যা-কিছু সংকটঃ
নবীন এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সমস্যা-সংকটের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ছাত্র- ছাত্রীরা জানালেন, এ কলেজে তীব্র শিক্ষক সংকট বিরাজমান । এ কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বললেন,“বর্তমানে কলেজে দুটি ব্যাচের মাত্র ১২০ ছাত্র- ছাত্রী থাকায় এবং কয়েকজন অতিথি শিক্ষক থাকায় এই শিক্ষক সংকটের ব্যাপারটি অনুভূত হচ্ছে না কিনা আগামী ২-১ বৎসরের মধ্যে যখন আরও কয়েক ব্যাচের ছাত্র- ছাত্রী ভর্তি হবে তখন অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে যাবে । তাই আমার মনে হয় সংকটের এই ব্যাপারটি শোচনীয় হওয়ার আগেই এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিৎ ”। এই কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো মসজিদ নেই । অথচ একটি মসজিদ থাকা অত্যন্ত জরুরী । ছাত্ররা কলেজ ক্যাম্পাসে অতিসত্বর একটি মসজিদ নিমার্ণের দাবি জানান । ছাত্রহলের ডাইনিং এ গ্যাসের সংযোগ দেওয়াও অতি জরুরী । এছাড়া মুক্তাদির-আবিরদের কাছে থেকে জানা গেলো লাইব্রেরী-ছাত্রহল এবং কলেজে বিভিন্ন দপ্তরে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন হলেও কর্মচারী আছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
শয়ন কুমার রায়

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১১

২২শে জানুয়ারি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু



পঞ্চগড় প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গতকাল শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি ও বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তু দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের বিপরীতে ফুলবাড়িতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এবং বাংলাবান্ধায় কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় দুইদেশের মন্ত্রী সাংসদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমসের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন উপলক্ষে দুইদেশের সীমান্তেই ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। রঙিন পতাকা দিয়ে সাজানো হয় বাংলাবান্ধা ফুলবাড়ি সড়ক।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য ঘাটতি পুরণ, আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যের সহজীকরণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণের লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিনেই ইমিগ্রেশন চালু হয়নি এ জন্য দুইদেশের নাগরিকরা ইমিগ্রেশন সহ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর দাবি জানিয়েছেন। বেলা একটা ১০ মিনিটে ফুলবাড়িতে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুর ফলক উম্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এর পর তিনি বাংলাবান্ধা জিরো লাইনে ফিতা কেটে ১২ সদস্য নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মো. মজাহারুল হক প্রধান, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফরিদা আখতার হীরা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য হোসাইন আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জসিমউদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, পুলিশ সুপার মো. শাহারিয়ার রহমান ও সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজাউল করিম। পঞ্চগড়ের সাংসদ মো, মজাহারুল হক প্রধান ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর জন্য একটি সোনার নৌকা, একমণ ইলিশ, ১০ কেজি বিশেষ মিষ্টি, ১০ কেজি তুলশী চা, ১০ কেজি গ্রীণ চা উপহার হিসেবে নিয়ে যান। স্থলবন্দরের উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান ভারতের ফুলবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে নগর উন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুর্খাজী ও বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন। প্রণব মুর্খাজী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা চলতে পারে না। এই বৈষম্য দূর করতে আমরা দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করছি। বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের চেয়ে ফুলবাড়ি- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অনেক সম্ভাবনাময়। কারণ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপাল ভুটানের গেটওয়ে ফুলবাড়ির কাছেই শিলিগুড়ি। শিগগিরই এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভারত- বাংলাদেশের সর্ম্পক ঐতিহাসিক। বন্ধুপ্রতিম দুইদেশের পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এই বন্দর চালুর ফলে দু দেশের কলকারখানা গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হল। এই বন্দর চালুর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা ট্রানজিট চালু হয়। আবার মহাজোট সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হল। আশা করছি শিগগিরই এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। পশ্চিম বঙ্গের নগর উন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের জন্য ১০ কোটি রুপির প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আট কোটি রুপি খরচ করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য পথ উম্মুক্ত করতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে ইমিগ্রেশন চালু করার আশ্বাস দেন। তিনি ঢাকা-বাগডোগরা বিমান চালুর ওপর গুরত্বারোপ করেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারত থেকে পাথরবাহী দুই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং দুই ট্রাক তুলা ভারতে প্রবেশ করে আমদানী- রপ্তানী কার্যক্রম শুরু হয়।সাপটা চুক্তির আলোকে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায় নেপাল- বাংলাদেশ ট্রানজিট রূট চালু হয়। এতদিন এই স্থলবন্ধর দিয়ে নেপাল-বাংলাদেশের মধ্যে সীমিত আকারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে আসছিল। এই বাণিজ্য কার্যক্রম উদ্বোধনের ফলে সার্কভুক্ত দেশ ভারত, নেপাল ছাড়াও ভুটান এমনকি চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এটি হলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হবে বাংলাদেশের একমাত্র বহুদেশীয় স্থলবন্দর। এ জন্য সরকার আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাবান্ধায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। আমদানিকারক ওয়াকিল আহমেদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে শুধুমাত্র পাথর আমদানি করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আট টন তুলা রপ্তানী করা হবে। ভারত থেকে আসবে ৩৪ টন পাথর। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নতুন করে পণ্য বাছাই করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। তাহলে কেবল এই স্থলবন্দরটি কার্যকর হবে। সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে অত্যন্ত সুবিধা ও লাভজনক অবস্থানে বাংলাবান্ধা অবস্থিত। বাংলাবান্ধা সহ এ অঞ্চলটি প্রতি বছর বন্যামুক্ত থাকে। এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি, ১০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ি শহর, ৫৮ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিং, ৬১ কিলোমিটার দূরে নেপালের কারকরভিটা এবং ৬৮ কিলোমিটার দূরে ভুটানের ফুয়েন্টসিলিং শহর। নেপাল ও দার্জিলিং-এ প্রচুর বিদেশী পর্যটক সারা বছরই আসে। বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটাসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে। শিলিগুড়ির রপ্তানিকারক ব্রিজ কিশোর প্রসাদ বলেন, বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন সংশোধন করতে হবে। নইলে এই বন্দর কার্যকর হবে না। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চালু করতে হবে। ইমিগ্রেশন সহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হলে পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোতে গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। আর এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হবে এ এলাকার হাজার হাজার বেকার মানুষের। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে পঞ্চগড়সহ গোটা উত্তরাঞ্চলের। দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে ।


মোঃ শাহজালাল

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড় পৌরসভাঃ নাগরিক সুবিধা নিয়ে নানা প্রশ্ন

পঞ্চগড় জেলার ৫টি উপজেলা জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। পঞ্চগড় জেলা শহর এলাকাই পঞ্চগড় পৌরসভা। পৌরসভার আয়তন ২১.৫০ বর্গ কিলোমিটার। ভাসমানসহ জনসংখ্যা প্রায় ৬৫,০০০(পয়ষট্টি হাজার) ভোটার সংখ্যা ২৭১৭ টি পুরুষ১৩৫৯১ জন ,নারী১৩৪২৪ জন,হোল্ডিং সংখ্যা ৭৫৯১, টি এর মধ্যে আবাসিক ৬২০৯ অনাবাসিক ১৩৮২ টি। পৌরসভার পাড়া মহাল্লা ৩১টি। ১৯৮৫ সালের ১৫ই জানুয়ারী পঞ্চগড় পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ২০০৫ সালে ৪ঠা মে পঞ্চগড় পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উন্নত হয়।

পঞ্চগড় পৌরসভার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা : এস বিবি/বি,এফ,এস ০.৭৯৯কিঃমিঃ,আর সি,সি ৬.২৮ কিঃমিঃ, ডাব্লিউ বি এম ২.৪৬৪ কিঃমিঃ, বিটুমিনাস কার্পেটিং ৫৩.৭ কিঃমিঃ,কাঁচা রাস্তা ৩৮.০৬ কিলোমিটার।
পৌর এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শ্মশানঘাট ও কবর স্থানসহ ৬১টি।
পঞ্চগড় পৌরঃ শহরে সরকারী-বেসরকারী অধিকাংশ অফিস আদালত অবস্থিত। এ শহর এলাকায় সরকারী-বেসরকারী স্কুল কলেজ মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৩৫টি, এছাড়াও আরও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরে পাকা ড্রেন ২৪.৮৭ কি .মি ,কাঁচা ড্রেন ৫০.৪০ কিঃ মিঃ।
অধিকাংশ স্থানে ডাস্টবিন না থাকায় পৌর নাগরিকরা তাদের বাসা বাড়ির ময়লা ড্রেনে ফেলে দেয়। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের প্রয়োজন থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিস্কার করতে পারছেনা। ড্রেনে ময়লা ফেলার কারণ উল্লেখ্য করে শহরের ইসলামবাগ মহল্লার বাসিন্দা এ হোসেন রায়হান বলেন পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই, তাই ডাস্টবিন খুঁজে খুঁজে ময়লা ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। আর ড্রেনে স্লাব নেই তাই মানুষ ড্রেনে ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। নুতন বসি- এলাকার সখিনা বেগম বাসা বাড়ির আর্বজনার পলিথিন ব্যাগ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেললেন দেখে মনে হয় পুরা রাস্তায় যেন ডাস্টবিন ।একই এলাকার জাহিরুল ইসলাম নাগরিক সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন রাতে মশার অত্যাচার আর দিনে মাছি এ নিয়ে আমরা পৌরবাসী আছি।

ধাক্কামারা এলাকার মার্শাল ডিষ্ট্রিলারি মসজিদের ইমাম আরাফাত ইদ্রিস বলেন ড্রেন নির্মানের কয়েক দিনের মাথায় ড্রেন ভেঙ্গে শেষ। বাড়ীর সামনে ড্রেন হলেও স্লাব দেওয়া হয়নি ।তাই যে কোন সময় শিশু সহ যে কোন বয়সের মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হতে পাড়ে। ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা অধ্যক্ষ সেলিমউদ্দীন বলেন পৌরসভা যে ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা সে ভাবে পৌর কর্তৃপক্ষ রাখে না । পৌর এলাকায় ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে পড়ে থাকায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে । লোকবল বাড়ানোসহ নির্দিষ্ট স্থানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে আবর্জনা ফেলার পরামর্শ দেন তিনি। পঞ্চগড় জেলার দ্রত বানিজ্যিক প্রসার ঘটার ফলে শহরের জনসংখ্যা দ্রত বাড়ছে। পৌরসভার সাবেক কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন পৌর সভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিকল্পনাটি সুদূর প্রসারী নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমার বাড়ীর সামনে যে ড্রেন হয়েছে তা রাস্তা থেকে অনেক উঁচু এবং যে দিকে ঢালু হওয়ার কথা সে দিকে উঁচু করে দেওয়ায় ময়লা পানি জমে আছে আর মশা মাছির জন্ম নিচ্ছে। বেশির ভাগ ড্রেন সরু হওয়ায় শহরের ভবিষ্যৎ ড্রেনেজ পরিকল্পনা পৌরবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।

রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১১

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাবুগঞ্জ উপজেলা, বরিশাল

বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে বাহেরচর গ্রামে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি উপজেলার একপ্রান্তে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির তিন দিক নদী দ্বারা বেষ্টিত। যোগাযোগের বাহন হচ্ছে ট্রলার, নৌকা। নদীভাঙ্গনের জন্য রাস্তা ঘাট ভালো নয়।

মৌলিক তথ্যঃ
প্রায় ৬ একর জমির উপর ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। দুইতলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বেড সংখ্যা ৩১টি। স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা আছে। UH&FPO, কনসালটেন্ট সার্জন, মেডিকেল অফিসার মেডিকেল অফিসার পদ ১৪টি।বর্তমান কোন শূন্য পদ নাই। নার্সিং সুপার ভাইজার ২ জন সহ স্টাফ নার্স আছে ১০ জন। কেন্দ্রটির মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১০৮ জন। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৯১ জন। ১৭টি পদ শূন্য। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে MCH ইউনিট-১টি, IMCI কক্ষ ১টি, EPI কক্ষ ১টি, ORT কর্ণার ১টি এবং ডিসপেনসারী কক্ষ আছে ১টি। এখানে অন-বিভাগ এবং বর্হিবিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

ইতিবাচক দিকঃ
ছায়াঘেরা, কোলাহল মুক্ত নির্জন স্থানে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন। নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া চালু আছে। সে্বা,স্বাস্থ্য, শিক্ষা সম্পর্কিত ফিল্ম শো দেখানো হয় নিয়মিত। সেবাপ্রদানকারীদের ব্যবহার ভালো বিনিমিয় মূল্য নেয় না, রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। কোন ধরনের টেষ্টের ফি নেয়া হয় না। রেফারেল প্রক্রিয়া চালু আছে। ভর্তি ফি নেয়া হয় না এবং ভর্তি রোগীদের নার্স কর্তৃক ঔষধ সেবন করানো হয়।

সীমাবদ্ধতাঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, এ জন্য রোগীর সংখ্যা কম। ডাক্তারদের উপস্থিতির সময় ঠিক নাই। ডাক্তাররা এখানে থাকেন না। রাতের বেলা প্রয়োজনেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু অকেজো এবং ড্রাইভার নেই। EPI টেকনিশিয়ান পদ শূন্য। স্টোর কিপার, ফার্মাসিস্ট এর ২টি পদ শূন্য। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নেই। ঔষধ আসতে সময় লাগে।জেনোরেটরের ব্যবস্থা নেই। ভর্তি রোগীদের খাবারের মান খুবই খারাপ।

জনগণের মতামতঃ
স্থানীয় জনগণের কেন্দ্রেটি সম্পর্কে ধারণা বিরূপ। জনগণ কেন্দ্রেটির অবস্থান পরিবর্তন করতে চায়। রোগী আনার ব্যবস্থা নেই, নদী পথে রোগী আনার জন্য বিকিল্প ব্যবস্থা চালুর দাবী জনগণের। ভর্তি রোগী মো: আসলাম বলেন যে খাবার দেয় তা রোগীরা খেতে পারে না। বেলা ২টার পর কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায় না, সবাই চলে যায়। অপারেশনের জন্য জেনারটের চালু সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকির ব্যবস্থা করা দরকার। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি থাকলে সেবার মান পরিবর্তন হবে এ কথা জনগণের।
সেবাদানকারীর মতামতঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মর্তুজা আলম বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের জন্য রোগীর সংখ্যা কম। যারা এখানে সেবা নিতে আসনে তাদেরকে বিনিময় মূল্য ছাড়াই সেবা দেয়া হয় এবং সরকারি সাপ্লাই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়া হয় শূন্যপদ পূরণের জন্য উপরে চাহিদা দেয়া আছে।নতুন নিয়োগের মাধ্যমে ৩ জন মেডিকেল অফিসার যোগ দিয়েছে কিন্তু কতদিন থাকবে জানিনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ সহ জীবন যাত্রার মান খারাপ। প্রয়োজনের সময় কিছুই পাওয়া যায় না কারণ নদী ভাঙ্গন এলাকা। একজন ডাক্তারের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারা যায় না বিধায় ধরে রাখা যায় না। রোগীদের খাবারের বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই কারণ প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই একটি পরিবার খাবার দেয়ার দায়িত্বে আছেন।জনগণের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের স্থানটি পরিবর্তন হলে ভালো হতো জনগনকে সেবা দেয়া যেত মানসম্মতভাবে।

পর্যবেক্ষণঃ
সেবাগ্রহিতদের সাথে ডাক্তার ভালো ব্যবহার করেন।বিনিময় মূল্য নেয় না। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ, রোগীর সংখ্যা কম, ডাক্তার সহ কোন কর্মচারীরা সময় মত আসে না। মনিটরিং বোর্ড আছে তথ্য হালনাগাদ নয়। ভর্তি রোগীদের খাবার মান খুবই খারাপ, রোগীর বেড, ময়লা ফেলার গামলা, বেড প্যান অপরিস্কার। ওয়ার্ড পরিদর্শনে ডাক্তার সঠিক সময়ে যায় না। বর্হিবিভাগ প্রতিদিন গড়ে একঘণ্টা থেকে দুই ঘন্টা খোলা থাকে।সবাপ্রদানকারীরা তাদের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করেন না। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের তদারকি নাই বিধায় যে যার মতন করে দায়িত্ব পালন করেন।

সুপারিশঃ
• যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।
• নদীপথে রোগী আনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
• সেবাপ্রদানকারীদের ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে প্রয়োজনে রোগীরা ডাক্তারের সেবা নিতে পারে।
• উপরস্থ কর্তৃপক্ষের নজরদারিসহ তদারকি বাড়াতে হবে।
• রোগীদের খাবার মান পরিবির্তন করতে হবে।
• অপারেশনসহ রাতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে জেনারেটর চালু করতে হবে।এসব সমস্যাগুলো পরিবর্তন হলে অনেকাংশে রোগীর যাতায়াত বাড়বে ।

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালঃ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান

পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, মহকুমা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে। সে সময় পঞ্চগড় দিনাজপুর জেলার অধিনস্ত মহকুমা ছিল ১৯৮৩ সালে পঞ্চগড় জেলা ঘোষণার সাথে সাথে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতাল। ২০০৩ সালে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের ভবন উন্নতিসহ ১০০ শয্যোর হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়।

হাসপাতালের ইতিবাচক দিকসমূহঃ পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ইনডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ জন চিকিৎসা সেবা নেয়। জরুরী বিভাগে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা নিযে কমপক্ষে প্রতিদিনে ৩৪ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০৬ জন রোগী নানা অসুখ বিসুখের চিকিৎসা নিয়ে থাকে। রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারীভাবে ঔষধ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মলম, স্যালাইন, ইনজেকশন, সিরিঞ্জ, খাওয়ার স্যালাইন, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা মলমূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে কিছু রোগের অপারেশন করা হয়। উল্লেখযোগ্য- হার্নিয়া, এপেনডিক্স, টিউমার, বিভিন্ন প্রকার ঘা, ইউট্রাসের অপারেশন সহ ছোটখাট আরও অনেক অপারেশন করা হয়। প্রকাশ মাতৃত্বকালীন সকল চিকিৎসা দেওয়াসহ সিজার করা হয়। খাদ্য বিষক্রিয়ায় বা বিষপানে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কোন রোগীকে পঞ্চগড় জেলার বাইরে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে রোগীকে দ্রুত কম খরচে পার্শ্ববর্তি জেলার উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র পৌছানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।
আত্মহত্যা বা হত্যা কিংবা কোন প্রকার অপমৃত্যুর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ময়না তদন্তের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বছরের প্রতিটি দিনই সার্বক্ষণিক হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্রটি খোলা থাকে ও সেবা প্রদান করে। ইনডোরের চিকিৎসাধীন রোগীদের কিছু ঔষধ সরকারী ভাবে দেওয়া হয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সূচিকিৎসার স্বার্থে ব্যবস্থা পত্র দিয়ে থাকে।
ইনডোরের রোগীরা সকালের নাস্তাসহ সকল খাবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফ্রি পেয়ে থাকে। সে কারনে অসহায় ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদ্যের জন্য সমস্যায় পরতে হয় না। প্রতিদিন রোগীদের বিছানাপত্র পরিস্কার রাখার জন্য বেড সীট পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। রোগীদের আনুসাঙ্গিক ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য সুইপার আছে। রোগীদের রাতের বেলা সেবা নিশ্চিত করতে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নার্স ডিউটি পালন করে।
সীমাবদ্ধতাঃ হাসপাতালের রোগীদের বিভিন্ন প্রকার ঔষধ প্রয়োজন হলেও সকল প্রকার ঔষধ সরকারীভাবে সরবরাহ না থাকায় সাধারন মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ডাক্তারের পদ ৩৫টি থাকলেও কর্মরত ডাক্তার আছেন সরকারীভাবে মাত্র ০৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের সংখ্যা ৬৭ টি, কর্মরত আছেন ৪০ জন। আধুনিক সদর হাসপাতালে মোট সেবাদানকারীর পদের সংখ্যা ১৩৪ জন, সেবাদানকারী রয়েছেন মাত্র ৬৮ জন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও রোগীদের সার্বক্ষনিক সুবিধার্থের জন্য একটি জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তা অচল হয়ে আছে এবং জরুরী ভিত্তিতে রোগীদের সু-চিকিৎসার জন্য জেলার বাহিরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ০২টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ০১টি একেবারে অচল। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। লক্ষ লক্ষ টাকার সরঞ্জামাদি হাসপাতালে থাকলেও তা রক্ষনাবেক্ষনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। জেলা শহরের একমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগম ঘটে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুইপারের অভাবে হাসপাতালের সার্বক্ষনিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
জনগণের মতামতঃ ডাক্তারের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনবল বাড়াতে হবে। হাসপাতালের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি ও চুরি প্রতিরোধ করতে হবে। ইনডোর ও আউটডোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ ডাক্তারের রুমে যেতে পারবে না। অফিস সময়ে ডাক্তারের প্রাইভেট প্রাকটিস নিষিদ্ধে আইন পাস করতে হবে।
সেবাদানকারীর মতামতঃ পদভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদানসহ জনবল বাড়াতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার নিমিত্তে সুইপার নিয়োগ এবং হাসপাতালের বিভিন্ন মূল্যবান সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নিয়োগ করতে হবে।

মোঃ শাহজালাল
সহযোগিতায়ঃ প্রিয় রঞ্জন সরকার,ও রওশনারা শিমু

একটু সচেতনতা দিতে পারে নিশ্চয়তা। আসুন না একটু সচেতন হই

পঞ্চগড় জেলায় রাজনগর একটি ছোট এলাকা। এ এলাকা পৌরসভার অভ্যন্তরে অবস্থিত। পৌরসভার সকল সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ একটু কম সচেতন। এই এলাকায় কিছু কিছু বাড়ির সামনে অনেক ময়লা আর্বজনা পড়ে থাকে। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও এলাকার মানুষ দূরে ডাস্টবিনে না গিয়ে বাড়ির বাহিরে ময়লা আবর্জনা ফেলে। রাস্তায় এসব ময়লা আর্বজনা পশু পাখি দ্বারা সমস্ত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে রাস্তা নোংরা হয় এবং জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়। এসব বর্জ্য পদার্থ হতে দুগর্ন্ধ ছড়ায় যা পরিবেশ ও বায়ু দূষণ করে ।

অপরদিকে এলাকার ভিতরে হোটেলের রান্নার জন্য একটি খোলা মাঠের পাশে কয়েকটি কাঁচা ঘর দেয়া হয়েছে, যেখানে রান্নার কাজ করা হয় এবং মাঠের মধ্যে একটি গর্ত করে তাতে সকল প্রকার রান্নার পরিত্যাক্ত জিনিস ও ময়লাযুক্ত পানি ফেলা হয়। এছাড়াও আশেপাশে সব বাড়ির ময়লা আর্বজনা সেখানে জমা করা হয়। এ কারনে সেখানকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে পাশাপাশি মাঠের মধ্যে যেসব ছেলেরা খেলা করে তাদের জন্য এসব বেশ অসুবিধাজনক ও ক্ষতিকর। কিন্তু তাদের এই দূষণযুক্ত পরিবেশই খেলতে হয়। এটি সমাজের একটি বিশাল সমস্যা, অথচ আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আসুন আমরা নিজেরা একটু সচেতন হই এবং অপরকে সচেতন করি । তবেই আমরা সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়তে পারবো ।
তুম্পা (স্বেচ্ছাসেবক)পঞ্চগড় থেকে।

আর কতদিন চলবে এ দূরাবস্থা

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১১কি.মি. দূরে অবস্থিত ৭৬ নং গলেহা কান্তমনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এ স্কুলে শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর ছিলো এবং শিক্ষামূলক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণও ছিল বেশ স্বতঃস্ফূত। এ স্কুলে বৃত্তি ও পেত অনেক ছাত্রছাত্রী। কিন্তু বতর্মান পরিস্থিতিতে এ স্কুলে শিক্ষার হার অনেক কম। সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে,৫ম শ্রেণীতে পড়া এমন কতগুলো ছাত্রছাত্রী নিজের নামটাও ঠিকমত লিখতে পারে না ।

অপরদিকে যে মাঠ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে থাকার কথা সে মাঠে এখন স্থানীয় এলাকাবাসীরা অবলীলায় গরু বাধে, কেউবা মাঠের সবুজ ঘাসে নিড়ানি দিয়ে ধান শুকায়, নেই কোন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ।বিনোদনের সঠিক চর্চা না থাকার এবং দক্ষ শিক্ষকদের অভাবে দিন দিন কমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার আগ্রহ। এভাবে এ স্কুল চলতে থাকলে এ স্কুলের শিক্ষার হার ক্রমশই কমে যাবে শূন্যের কোটায়, সে দিন আর দূরে নয় যদি এখনই হাল না ধরা হয়। তাই আর বসে থাকা নয় স্কুল কমিটির এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ।

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

যৌতুক প্রথা একটি ভয়াবহ সামাজিক অভিশাপ। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই কন্যার পিতারা এ যৌতুক প্রথার কবলে পতিত হয়েছে। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ীতে এর জন্য বহু নীপিড়ন সহ্য করছে। যতই দিন যাচ্ছে সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে ততই যেন যৌতুক প্রথার প্রকোপ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুর অত্যাচার, নারী নির্যাতন নিত্য খবর। 'পণ' হিসাবে মোটা অংকের নগদ টাকাতো আছে তার সাথে আরও মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, টিভি,ফ্রিজ, ইত্যাদি। এমনকি ফ্লাটবাড়ী, কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার খরচের কথাও কোথাও কোথাও এসে পড়ে । কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা হয়ত কন্যার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে তার যথাসর্বস্বকরে থাকে। কিন্তু কোন কারণে যদি পিতারা প্রতিশ্রুতি ঠিকমত পন্যসামগ্রী পাত্র পক্ষকে না দিতে পারে তাহলে মেয়ের উপর চলে নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্যাতন এমনকি হত্যা করার চক্রান্ত। পণ প্রথার পরিনাম হচ্ছে মারাত্বক। বর্তমান যৌতুক এক জায়গায় স্থির নয়। এক শ্রেণীর মানুষের সহজ অর্থ লোভ এ যৌতুক ও পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এ নিষ্ঠূর যৌতুক প্রথা বিলোপ করতে হবে এটা যেমন সমাজের দাবী তেমনি সরকারের দাবী।সরকার যৌতুক প্রথা বিলোপ করতে বহুদিন থেকেই উদ্যোগী হয়েছেন। এর জন্য আইন ও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার কতটুকুই বা কার্যকরী হয়ছে? এ ব্যাপারে সরকার এবং দেশের জনসাধারণ উভয় পক্ষই সমভাব দায়ী।

যে দেশের নারী সমাজ এখনো তাদের স্বামীর নাম মুখে আনতো না, সেই সমাজ থেকেই যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন তুলে দেয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু নারীর মুক্তির জন্য চাই নারী আন্দোলন, নইলে এ প্রথার বিষময় থেকে রেহাই নেই। আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমাজের প্রতিটি নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে।

তবে একটি আশার কথা, আমাদের নারী সমাজ একেবারে নীরব হয়ে নেই। তারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এখন এর সাথে সরকারী আইন যুক্ত হলেই যৌতুক প্রথা এদেশ থেকে অতিদ্রুত উঠে যাবে। আমাদের সকলের কামনা, দেশ থেকে এ অভিশাপ প্রথা উঠে যাক, বাঁচুক নারী সমাজ, বাঁচুক কন্যাদায়গ্রসত্ম পিতা-মাতা।


রাজশাহী থেকে
নিলুফার ইয়াসমনি

বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড়ে বোরো ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকের নতুন প্রযুক্তি, কৃষিবিদরা অবাক ।


পঞ্চগড় জেলায় তুলনামূলক শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেশী থাকায় বোরো মৌসুমে ধানের চারা উৎপাদনে কৃষকদের নানা ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। সে কারণে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা বোরো চাষে লাভের মুখ সহসায় দেখতে পায় না । বোরো চাষের ক্ষেত্রে চারা উৎপাদনই মূল প্রতিবন্ধকতা ।

তবে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা কৃষিবিজ্ঞানকে হার মানিয়ে বোরো বীজ তোলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে চারা গজানোর নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে । কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় জমি চাষ করে বেড তৈরি করা হয় প্রথমে ।পরে ধানের বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুরো বেডটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়, বেডের ধার গুলো কাঁদা দিয়ে পলিথিনটি চেপে দেওয়া হয় । ৩০/৩৫ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলা হয় ।২/৪ দিন ফাঁকা থাকার পর কৃষকেরা বোরো বীজ তুলে জমিতে চারা রোপন করে ।

পঞ্চগড় পৌরএলাকার উত্তর জালাশীপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানায় এই পদ্ধতিতে আমরা বোরো ধানের বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদন করে আসছি। ফলনের ব্যাপারে কৃষক আশরাফুল বলেন আমরা আশানুরুপ ফলন পাচ্ছি। তবে চারাগুলো জন্ম থেকেই পলিথিনের ভিতরে বড় হওয়ার কারণে জমিতে রোপনের পর প্রায় ১০ ভাগ চারা মারা যায়। তিনি আরো বলেন এ পদ্ধতি আবিষ্কারের আগে বোরো চাষ আমাদের এ এলাকার জন্য ছিল কঠিন ব্যাপার। তারা নিজেরা এপদ্ধতি আবিষ্কার করে বোরো ধান চাষ শুরু করলেও দীর্ঘদিনেও তাদের কাছে কোন কৃষিবিদ জাননি কিংবা কোন বছরেও তারা কৃষি ভূর্তকি পাননি । পঞ্চগড় জেলায় বোরো চারা উৎপাদনের এপদ্ধতি এখন ব্যাপক জনপ্রিয় ।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কুমার চ্যাটার্জী জানান চলতি বোরো মৌসুমে ৪৩,৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হবে।
বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের খাদ্যশস্য গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গবেষণা কর্ম দায় সারা গোছেরভাবে চালিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশের সম্ভবনাময় জেলা পঞ্চগড়। কখনো খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যা সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে এ জেলার কৃষি ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর কাড়তে পারে নি এখনো। কি অদ্ভুত কৃষি বিজ্ঞানকে হার মানিয়ে পঞ্চগড়ের কৃষককূল বোরো চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে র্দীঘদিন ধরে বোরো ধান চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেই যাচ্ছে ।

ধান গবেষণা কর্মকর্তারা তাদের গোছানো পদ্ধতি ছাড়া নতুন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা ভাবনা করছে না ।প্রজাতন্ত্রের এ সকল কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সম্মানজনক বেতন ভাতা দামী গাড়ি আলিশান বাড়ি অফিস পিয়ন কেরানি সবই পেয়েছে ।

যাদের টাকায় এত সব কিছু তাদের জন্য সরকারী এ কৃষিবিজ্ঞানীরা কতটুকুই অবদান রাখছে। সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা তারা যেন আজো চাষা, সফল কৃষক হতে পারলো না । সফলতা বিজ্ঞানীদের, ব্যর্থতা কৃষকদের। বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের করপোরেট চিন্তা চেতনার পরিবতর্ন না হলে এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব না। প্রতি বছর মোট জনসংখ্যার সাথে ২০ লাখের বেশী মানুষ যোগ হচ্ছে, সাথে শতকরা ৪ ভাগ কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এখনই সময় দ্রুত আমরা সকলে মিলে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুপ্ত পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে আগামী প্রজন্মকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।

কমল কুমার সরকার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা কমলা প্রকল্প পঞ্চগড় অফিসে কর্মরত আছে। একদিন কমলা প্রকল্প অফিসে কৃষি বিজ্ঞানও বর্তমান কৃষির অবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। কৃষিবিজ্ঞানের উদাহরন দিয়ে শুরু করেন,শীতের কারণে সবজি বীজতলা রাতে প্লাস্টিক চালা দিয়ে ঢেকে দেয় এবং দিনের বেলায় খুলে দিতে হয়। এতে সূর্যের আলো ভালোভাবে পায় আর রাতে কুয়াশা এবং ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায় । কৃষি বিজ্ঞান মতে ধানের বোরো চারা ‌উৎপাদনে যে প্রযুক্তি এ অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে যা কোন বইতে বা গবেষণা থেকে তথ্য পাওয়া যায় নি । এখানে কৃষকরা বীজতলা তৈরী করার পরে অঙ্কুরিত ধানের বীজ ফেলে সম্পূর্ণ বীজের উপর রঙ্গিন এবং সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ফেলে আইলের চারপাশে কাঁদা দিয়ে আটকিয়ে দেয় যাতে পলিথিন সরে না যায়। ৩৫/৪০ দিন পর কৃষকরা সরাসরি পলিথিন সরিয়ে চারা উৎপাদন করে মাঠে রোপন করে সম্পূর্ণ চারা উৎপাদনের সময়টি পলিথিনে ঢেকে রাখে যা সূর্যের আলো বা বাতাস পায় না।
চারা উৎপাদনের জন্য যা দরকার -১.মাটি ২.আলো ৩.বাতাস ৪.এবংপানি এ কয়েকটি অবশ্যই প্রয়োজন। পঞ্চগড়ে বোরো চারা উৎপাদনে বর্তমান প্রযুক্তি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা করে গবেষণার ফলাফলটি কৃষকের মাঝে তুলে ধরা দরকার। কৃষিবিদ কমল কুমার কৃষি বিজ্ঞানের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরলেন। তার মতে, ধান চাষে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা হলে কৃষকদের কোন হয়রানীর মুখোমুখী হতে হবে না।

শাহ্জালাল
পঞ্চগড়

মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১১

পঞ্চগড়ে বহুমূখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ উদ্ধোধন

বহুমূখী পাট শিল্প উদ্যোক্তাদের ১০ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) থেকে পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর সহযোগিতায় দারিদ্র কল্যাণ সংস্থা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।


পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন। পঞ্চগড় শহরের ইসলামবাগে সংস্থার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী পরিচালক মো.শাহজালাল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের রংপুর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. মাজিদুর রহমান ভুইঁয়া ও সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম (শহীদ) বক্তব্য দেন।

প্রশিক্ষণে ২০ জন নারী উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছে। এতে পাট থেকে রকমারী পণ্য সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) প্রশিক্ষক মো. শামীম আহমেদ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন। দৈনন্দিন ব্যবহারোপযোগী সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস,ফার্নিশিং দ্রব্যাদি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানা যায় প্রশিক্ষণ শেষে দারিদ্র কল্যাণ সংস্থার নিজস্ব ক্ষুদ্র পাটকলে পাট জাত পন্য উৎপাদন কাজ করবে এসকল প্রশিক্ষনার্থী। স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত পাট পন্য সামগ্রী বাজার জাত করা হবে।